গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি :
পতিত স্বৈরাচারের দোষর বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিছুর রহমান হারিছ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার খবরে মঙ্গলবার দিনভর উপজেলা জুড়ে উল্লাস প্রকাশ করছে গৌরনদীর সাধারন মানুষ। অপর দিকে তার ফাঁসির দাবি জানিয়ে ওইদিন সকালে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গৌরনদী উপজেলা বিএনপি।
জানাগেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পালিয়ে যাওয়া পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের সাবেক সাংসদ, দেশের দক্ষিনাঞ্চলের সন্ত্রাসের গডফাদার আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর আশকারায় সাবেক ওই পৌর মেয়র আওয়ামী লীগের ক্ষমতার গত ১৫ বছরে নিজেকে গৌরনদীর দন্ডমুন্ডের কর্তা হিসেবে গড়ে তোলেন। রাষ্ট্রিয় আইন কানুনের কোন বালাই ছিলনা। তার কথাই ছিল এখানে আইন। কথায় কথায় তিনি সম্মানিত লোকজনকে অপমান অপদস্ত করতেন। বিরোধী মতের রাজনৈতিক দল বিএনপি’র কর্মীদের ওপর চালিয়েছেন নির্যাতনের ষ্টিম রোলার। নানা কৌশলে তিনি তার নিজ দলের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদেরকে দুরে ঠেলে দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী নির্ভর ও তেলবাজ হাইব্রিড নেতা-কমীদের একটি অভিশপ্ত দলে পরিনত করেছিলেন। দলের ভেতরে গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। তার নিজস্ব বাহিনীটি হারিছ বাহিনী নামে পরিচিত ছিল। ওই বাহিনীটি একাধিক বার নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়। এতে একাধীক প্রানহানির ঘটনাও ঘটেছে। এলাকায় টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজীসহ সন্ত্রাস নৈরাজ্য সৃষ্টির পাশাপাশি মাদক বানিজ্যে নিয়ন্ত্রন করত। এ সব করে গত ১৫ বছরে তারা অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন। এলাকার এমন কোন সাধারন মানুষ খুজে পাওয়া যাবেনা যারা হারিছ বাহিনীর হাতে নিগৃহিত হননি।
জানাগেছে, ৫অক্টোবর হাসিনা সরকারের পতনের পর সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও যেতে পারেননি হারিছ। তিনি উপজেলার দিয়াশুর গ্রামের পৈত্রিক বাড়িতে আটকা পড়েন। এলাকায় জনশ্রæতি রয়েছে ২৫লক্ষ টাকা দিয়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতাকে ম্যানেজ করে তার সহয়তায় একটি এ্যাম্বুলেন্সে চড়ে গত ৬ অক্টোবর গভীর রাতে উপজেলার হোসনাবাদ লঞ্চঘাটে পৌছেন হারিছ। সেখান থেকে ট্রলারে পালরদী নদী পাড়ি দিয়ে তিনি মুলাদী উপজেলার এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরদিন ৭ অক্টোবর তিনি লঞ্চযোগে রাজধানী ঢাকায় পৌছে আতœগোপন করেন।
গোপন সুত্রে খবর পেয়ে রামপুরা থানা পুলিশের সহয়তা নিয়ে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের একটি টীম মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ খবর এলাকায় জানাজানি হলে এলাকার নির্যাতিত সাধারন মানুষ রাজপথে নেমে এসে উল্লাসে ফেঁটে পড়ে। তারা উপজেলার বিভিন্ন রাজপথ, হাট-বাজার বাসষ্ট্যান্ডে জড়ো হয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মীরাও সাধারন জনতার সাথে রাজপথে নেমে আসে। পরে ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। অসংখ্য নারী-পুরুষ এ সময় ঝাড়– হাতে মিছিলে অংশ নেয়। তারা সন্ত্রাসী হারিছ, খুনি হারিছের ফাঁসির দাবি জানায়। মিছিল শেষে বাসষ্টান্ডের জিরো পয়েন্টে তারা একটি সমাবেশ করে। সেখানে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান খান মুকুল, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ সরোয়ার আলম বিপ্লব, সদস্য সচিব শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম কাজল, গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মোঃ বদিউজ্জামান মিন্টু, গৌরনদী পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আহবায়ক শরীফ শফিকুর রহমান স্বপন, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ ফরিদ মিয়া, বরিশাল উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মোঃ সাইয়েদুল আলম খান সেন্টু প্রমুখ।
গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া জানান, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সাবেক মেয়র হারিছের বিরুদ্ধে থানায় ৩টি মামলা রয়েছে। পুলিশ তাকে দীর্ঘদিন যাবত খুঁজছিলো। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পুলিশ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকার রামপুরা এলাকায় অভিযান চালায়। ওই এলাকার একটি ভাড়া বাসায় সে আত্মগোপনে ছিল। পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক মেয়রকে মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বর্তমানে সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
Leave a Reply